Thursday, March 5, 2009

মনে পড়ে সেইসব দিনের স্মৃতি

অনেক দিন পরে আজ আমি কিছু লিখতে যাচ্ছি । গত কিছুদিনের অনেক ঘটনা তে আমাদের দেশের মানুষ হতবিহবল হয়ে পড়েছে। বলার ভাষা বোধ করি অনেকেই হারিয়ে ফেলেছেন । তবুও আমাদের কে বলতে হবে, মুখ বুজে নিরবে আর কত সহ্য করবে এ জাতি। এতগুলো মানুষ্ কে যারা কুকুর বিড়ালের মত মেরে ফেলে দিল তাদের বিচার চায় এদেশের নিরীহ মানুষ। বারবার কেন ওরা পার পেয়ে যাবে? কেন ওরা বাংলার বুকে ন্রিসংসতা আর বর্বরতা করে এত সহজে পরিত্রান পেয়ে যাবে? এ প্রশ্ন আজ আমাদের সকলের।

ক্যাডেট কলেজের অনেক সিনিয়র ভাই যাদের সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে, তাদের দুইজনকে হারালাম সেদিনের সেই বিডিআর হামলায়। মাজহার ভাই ( ক্যাপ্টেন মাজহার) আর হায়দার ভাই (ক্যাপ্টেন তানভীর); মাজহার ভাই ছিলেন আমাদের একই হাউসের, আমাদের দুই ব্যাচ সিনিয়র ( তিতাস হাউস, ১৩তম ইনটেক) আর আমরা ছিলাম ১৫তম ইনটেক কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের। ওনাকে কলেজে থাকাকালীন সময়ে আমরা মজা করে ডাকতাম "ঘোড়া ভাই" নামে, যেটা ছিল ওনার নিকনেম। এই নামে ডাকার জন্য একবার অনেক পানিশমেন্ট খেয়েছিলাম আমরা পুরো ইনটেক। এখনও আমার মনে পড়ে সেই দিনের স্মৃতি, যেদিন আমরা "বি" ফর্মের ছেলেরা সবাই মিলে সান্ধ্য প্রেপের সময় কোরাস করছিলাম "ঘোড়া, ঘোড়া, তোর লেজটা লম্বা ", তারপর মাজহার ভাইদের ব্যাচের একজন ( আহসান ভাই) এসে আমাদের সবাইকে ডেকে ফর্মের বাইরে নিলেন, পাগলা সাদিক স্যার চলে আসলেন, অ্যাডজুটেন্ট চলে আসলেন; তারপর সবাই ফল্ইন করলাম বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে। এরপর শুরু হল পানিশমেন্ট, পুরো ফার্স্ট প্রেপ, সেকেন্ড প্রেপ পানিশমেন্ট চলল; আমাদের অনেকের অবস্থা খারাপ হয়ে গেল, কেউ কেউ অল্ররেডি হাসপাতালে। সেই কোরাস গানের রচয়িতা ছিলাম এই আমি, এখন খুব খারাপ লাগে যখন চিন্তা করি যে সেই মাজহার ভাই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন, চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন অন্য এক জগতে। মাজহার ভাই যখন ক্লাস ১২ এ হাউস প্রিফেক্ট হলেন, তখনও ওনার সাথে আমার একবার কি নিয়ে একটু মনোমালিন্য হয়েছিল; আজ আক্ষেপ করি উনি আমাদের মাঝে নেই বলে। সেইসব স্মৃতিগুলো যখন মনের পর্দায় ভেসে উঠে, তখন নিজের কাছে মেনে নিতে বড় কষ্ট হয় কিভাবে চলে গেল সেই মানুষটি। কলেজের গেমস গুলোতে ববাবরই ভাল ছিলেন তিনি; গত রি-ইউনিয়নেও আমার সাথে ওনার দেখা হয়েছিল। তখনও কি কেউ ভেবেছিল যে মানুষটি এভাবে চলে যাবে সবাইকে ছেড়ে! আর একজন ভাই ( আমাদের তিন ব্যাচ সিনিয়র ) হায়দার ভাই ( ক্যাপ্টেন তানভীর), তার কথা যখন মনে হয়, তখন ভেসে উঠে সেই বাস্কেটবল ম্যাচের স্মৃতি। কলেজের অন্যতম সেরা দৌড়বিদ ছিলেন যিনি, সেরা হার্ডলস এ, সেরা লং জাম্প এ, সেরা বাস্কেটবল এ, আর অসম্ভব ভাল খেলতেন ফুটবল, ক্রিকেট, আর ভলিবল; নিঃসন্দেহে কলেজের সেরা অল-রাউন্ড স্পোর্টসম্যান। ভাবতে অবাক লাগে যে আমাদের দেশের মানু্য ( নরপশু ) এদের মত মানুষেকে নারকীয় ভাবে খুন করল আর এভাবে পালিয়ে যেতে পারল, জানিনা আমাদের জাতির ভাগ্যে কি আছে! তবে আমরা সবাই এর বিচার চাই, এ বর্বরতা, এ নৃসংসতার বিচার চাই। আমাদের ভাইদের বিচার চাই।